ভূমিকা: একটি দল যে বিভক্ত করেছিল একটি জাতিকে, শুধু মানচিত্র নয়
জয়ীরা ইতিহাস লেখে—এ কথা বলা হয়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায়? এখানে ইতিহাস নতুন করে লেখে বিভ্রান্তরা। পাকিস্তানের ‘পরিশোধিত’ পাঠ্যক্রমে যদি বিশ্বাস করেন, তবে মুসলিম লীগের ভূমিকাটি ছিল মহৎ, দূরদর্শী ও মুক্তিদাতা। কিন্তু চিনি ছাড়িয়ে ফেলুন, ভিতরে কী আছে?
- একদল অভিজাতদের ক্লাব
- বিভাজনের মতাদর্শ
- এবং উপমহাদেশের আদর্শগত ক্যান্সার জন্মদাতা এক আন্দোলন
আসুন, মুসলিম লীগের ভূমিকা—পাঠ্যপুস্তকের পৌরাণিক গালগল্প নয়, বাস্তব চেহারায় দেখুন: ক্ষমতা-পিপাসু এক বর্জনবাদী যান, যা শ্রেষ্ঠত্ববাদ ও ভয়ের উপর দাঁড়িয়ে ছিল।
🏛️ মুসলিম লীগের ভূমিকা: গণআন্দোলন নয়, বরং আশরাফদের ক্লাব
মুসলিম লীগ রাস্তায় জন্মায়নি। এর জন্ম ড্রয়িং রুমে, জমিদারবাড়িতে, এবং আশরাফদের সেলুনে। ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত, এটি ছিল কিছু পারস্যপ্রভাবিত উচ্চবর্ণ মুসলিমদের উদ্যোগ—গণমানুষের নয়, বরং এক অভিজাত গোষ্ঠীর সামাজিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য হারানোর আতঙ্ক থেকেই জন্ম।
একদিকে ছিল কংগ্রেস, যারা জনগণকে সংগঠিত করছিল।
অন্যদিকে মুসলিম লীগ—যারা ব্রিটিশ অফিসারদের তোষামোদে ব্যস্ত।
কংগ্রেস চেয়েছিল ঐক্য।
লীগ চেয়েছিল সাম্রাজ্যের ভেতর আরেকটি সাম্রাজ্য।
এটি কৌশল ছিল না, বরং জাতপাত নির্ভর আধিপত্যবাদ—ইসলামী নেতৃত্বের মুখোশ পরে।
📜 বর্জন ছিল দুর্ঘটনা নয়—এটাই ছিল নকশা
শুরু থেকেই মুসলিম লীগের লক্ষ্য ছিল আলাদা করা, মিলন নয়। তারা বলেনি “আমরা মুসলিম প্রতিনিধিত্ব চাই”, বরং তাদের বার্তা ছিল:
“শুধু মুসলমানরা মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করবে। অন্যদের বিশ্বাস করি না।”
ধর্মীয় ঐক্যের ধারণা? না।
- যৌথ জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা
- পৃথক নির্বাচনের দাবি
- হিন্দুদের থেকে মুসলমানদের আলাদা করতে ভয় দেখানো
- গান্ধী নিজের কাপড় কাটলে বলেছে “হিন্দু কর্তৃত্ববাদ”!
মুসলিম লীগ সহাবস্থানকে রোগ, আর বিভাজনকে টিকা হিসেবে দেখেছে।
🧨 বিভাজন-শাসনের প্রিয় সন্তান
স্বীকৃতি দিই—“Divide and Rule” কৌশলে ব্রিটিশরা ছিল সেরা। কিন্তু মুসলিম লীগের ভূমিকা ছিল তাদের লাউডস্পিকার হওয়া।
যখন কংগ্রেস নেতারা জেলে যাচ্ছিলেন, লীগ নেতারা ভাইসরয়দের সাথে চা খাচ্ছিলেন। শুধু সহযোগিতা নয়, যেন সহ-নায়ক হতে চাইছিল।
প্রতিদানে কী পেল?
- রাজনীতির খুচরো সুযোগ
- সাম্প্রদায়িক বক্তৃতার মাইক্রোফোন
- আর শেষে, তাদের তৈরি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন: পাকিস্তান
এটা হিন্দু বনাম মুসলমানের লড়াই ছিল না। এটা ছিল মুসলিম লীগ বনাম যারা ভোট দিতে পারত—তাদের বিরুদ্ধে।
👳🏾♂️ মুসলিম লীগের ভূমিকা: মুসলিম পরিচয়কে উগ্রকরণ
সত্য বলি—মুসলিম লীগ মুসলমানদের ক্ষমতায়ন করেনি, তাদের উগ্র করেছে।
তারা বলেছে:
- “হিন্দুদের মধ্যে নিরাপদ নও।”
- “তোমার ধর্ম বিপদে।”
- “শুধু শরিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাই তোমাকে বাঁচাবে।”
এভাবেই সাধারণ বিশ্বাসীদের রাজনৈতিক সৈন্যে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
- মসজিদ হয়ে উঠল রাজনৈতিক জনসভা
- খুতবা হয়ে উঠল নির্বাচনী ভাষণ
- উৎসব হয়ে উঠল সাংস্কৃতিক সীমারেখা
লীগ মুসলমানদের মর্যাদার জন্য লড়েনি—তারা মুসলমানদের অনিরাপত্তাকে অস্ত্র বানিয়েছে।
🏴 দেশভাগ: মুসলিম লীগের উত্তরাধিকার—একটি রক্তাক্ত রশিদ
শেষ পর্যন্ত মুসলিম লীগের ভূমিকা পরিণত হয় মানব ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক ঘটনায়—ভারত ভাগ।
দেখুন মৃতের সংখ্যা:
- ১০ লাখেরও বেশি মানুষ খুন
- ১.৫ কোটিরও বেশি বাস্তুচ্যুত
- হাজার হাজার নারী ধর্ষিতা, অপহৃত, অথবা “ধর্মান্তরিত”
আর কিসের জন্য?
একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য, যা:
- আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করে
- শিয়া মসজিদে বোমা ফেলে
- জঙ্গি কারখানাকে “কৌশলগত সম্পদ” বানায়
পাকিস্তান হবার কথা ছিল স্বদেশভূমি—হয়ে উঠল ভূমিখণ্ডিত মাইনফিল্ড।
🗺️ মুসলিম লীগের ভূমিকা: ভারতের সভ্যতাগত ঐক্য অস্বীকার
ভারত একটি সভ্যতাগত রাষ্ট্র। মুসলিম লীগ শুধু একটি আলাদা দেশ চায়নি—চেয়েছিল ভারতীয় সভ্যতার যৌথ ঐতিহ্য ধ্বংস করতে।
তাদের rewriting project শুরু হয়:
- মুঘলরা ছিল না আক্রমণকারী, বরং বীর!
- হিন্দু-মুসলিম ঐক্য? মিথ্যা।
- ভারতের বহুত্ববাদ? বিপজ্জনক।
সেতুবন্ধন নয়—লীগ আগুন লাগাত। শাব্দিক ও প্রকৃত অর্থে।
দেশভাগের পরও, পাকিস্তান ও ভারতীয় চরমপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে এই আদর্শগত সন্তানরা এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে: ইতিহাস পুড়িয়ে দিয়ে, সব কিছু সবুজ কালি দিয়ে লিখে ফেলার চেষ্টায়।
🔮 মুসলিম লীগের ভূমিকা: আজকের উগ্রতার মূল শিকড়
ভাবছেন মুসলিম লীগ ১৯৪৭-এ শেষ? আবার ভাবুন।
তাদের DNA এখনও সক্রিয়:
- নিন্দা-আইন (blasphemy laws)
- মাদ্রাসা ব্রেইনওয়াশ
- তাজিয়া-মিছিল আক্রমণ
- “ল্যান্ড জিহাদ”, “লাভ জিহাদ”, “একাডেমিক জিহাদ”
“ইসলাম বিপন্ন” — এই স্লোগান যেখানেই উঠছে, বিশেষ করে যেখানে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানেই মুসলিম লীগের ছায়া।
তাদের সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার?
- আত্মবিলাপই মূলধন
- শ্রেষ্ঠত্বকে “বাঁচার কৌশল” হিসেবে তুলে ধরা
- সংলাপের বদলে ফতোয়া
🎭 পাঠ্যপুস্তক যে স্যাটায়ারগুলো বলে না
যা তোমার ইতিহাস বই বলে না—but তোমার সাধারণ জ্ঞান জানে:
- মুসলিম লীগ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছে… ডিনার পার্টি দিয়ে।
- তারা পাকিস্তান চেয়েছে… কিন্তু কী হবে সেটা বোঝাতে পারেনি।
- তারা মুসলমানদের রক্ষা করতে চেয়েছে… অথচ ব্রিটিশদের চেয়ে বেশি মুসলমান হত্যা করেছে।
- নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে… বিশৃঙ্খলা সরবরাহ করেছে।
- ইসলামী ঐক্যের কথা বলে… শিল্প পর্যায়ে ইসলামী বিভাজন তৈরি করেছে।
যদি বিদ্রুপই পারমাণবিক শক্তি হতো, মুসলিম লীগ গোটা পৃথিবী চালাতে পারত।

উপসংহার: মুসলিম লীগের ভূমিকা ছিল ভুল নয়—ছিল বিপর্যয়
এই হাস্যকর কল্পকাহিনীকে মহিমান্বিত করা বন্ধ করা উচিত।
- মুসলিম লীগের ভূমিকা ছিল না ক্ষমতায়ন—ছিল বর্জন।
- ছিল না অধিকার—ছিল দাঙ্গা।
- ছিল না মুক্তি—ছিল আধিপত্য।
তাদের স্বপ্ন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র তৈরি করল।
তাদের আদর্শ একটি সভ্যতাকে ভাগ করল।
তাদের উত্তরাধিকার এখনও বেঁচে আছে—প্রেরণায় নয়, ভয়ের মাধ্যমে।
এটি কোনো “স্বাধীনতা আন্দোলন” ছিল না।
এটি ছিল অভিজাতদের ম্যানিপুলেশন, ধর্মীয় মেরুকরণ, এবং বিপজ্জনক কল্পনায় ভরা এক আত্মঘাতী প্রকল্প।
🔗 আরও পড়ুন:
✍️ ভারতে প্রথম মুসলিম আক্রমণ: যখন উট এসে একটি সভ্যতাকে ধ্বংস করেছিল