ভূমিকা: ৭১২ খ্রিস্টাব্দে আসলে কী ঘটেছিল?
আপনি আলেকজান্ডারের নাম শুনেছেন। চেঙ্গিস খানের নামও। কিন্তু সম্ভবত আপনি মোহাম্মদ বিন কাসিম সম্পর্কে সবচেয়ে ‘পরিষ্কার’ সংস্করণই শুনেছেন—সিন্ধু জয় করা তথাকথিত নায়ক।
বিশেষ করে যদি আপনি পাকিস্তানি পাঠ্যবই পড়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন কাসিমকে একজন ন্যায়পরায়ণ, মহান শাসক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি নাকি ইসলাম শান্তিপূর্ণভাবে ভারতে এনেছিলেন। তাকে বলা হয় কোরআন হাতে, মানবাধিকারের স্বপ্ন নিয়ে আসা কিশোর জেনারেল।
দুঃখিত, কিন্তু সেটি ইতিহাস নয়—ওটা প্রোপাগান্ডা।
ভারতে প্রথম মুসলিম আক্রমণ মহৎ ছিল না, এবং এটি মোটেই শান্তিপূর্ণ ছিল না। এটি ছিল রক্তাক্ত, বর্বর, বিশ্বাসঘাতকতায় ভরা—যেখানে ছিল ধর্ষণ, দাসত্ব ও গণহত্যা—একজন কিশোর যুদ্ধবাজের নেতৃত্বে, যিনি কোনও মুক্তিদাতা নন, বরং খলিফার গুন্ডা ছিলেন।
চলুন, ভাঙি ৫টি বড় মিথ।
🐫 ১. মোহাম্মদ বিন কাসিম ছিলেন না কোনো নায়ক—তিনি ছিলেন ধর্মান্ধ নিপীড়ক
আসুন সত্যি দিয়ে শুরু করি: কাসিম কোনও মুক্তিদাতা ছিলেন না। তাকে পাঠানো হয়েছিল ইরাকের কুখ্যাত গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের আদেশে—যিনি ছিলেন নিষ্ঠুরতা, স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মীয় দখলের প্রতীক।
কাসিমের বয়স ছিল মাত্র ১৭। কিন্তু পাকিস্তানের অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ে যেমন বলা হয় যে তিনি “উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম শাসক” এবং হিন্দুদের প্রতি সদয় ছিলেন—বাস্তবে তার কৌশল ছিল আধুনিক আইসিসের মত:
- দেবল, রাওর, ব্রাহ্মণাবাদ, এবং মুলতানে অসংখ্য সাধারণ মানুষকে হত্যা
- মন্দির ধ্বংস, মূর্তি ভাঙা, পুরোহিত হত্যা
- হাজার হাজার নারী ও শিশু দাস হিসেবে বন্দী ও পাঠানো
- রাজা দাহিরের কন্যাদের ধর্ষণ করে “উপহার” হিসেবে খলিফার কাছে প্রেরণ
চাচনামা এবং আল-বিলাদুরি’র ফুতুহুল বুলদানের মতো মূল ঐতিহাসিক সূত্রে উল্লেখ আছে—কাসিম শুধু দখলই করেননি, বরং আগুন, ধর্ষণ, কর এবং দাসত্বের রাজত্ব চালিয়েছিলেন।
সবচেয়ে讽刺পূর্ণ সত্য? খলিফাই পরে কাসিমকে হত্যা করেন। কারণ তিনি অতিরিক্ত নিষ্ঠুর ছিলেন না, বরং অতিরিক্ত ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন।
⚔️ ২. প্রথম মুসলিম আক্রমণ ছিল লোভের কারণে—ন্যায়বিচারের কারণে নয়
সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্প হল—সিন্ধের জলদস্যুরা আরব জাহাজ আক্রমণ করেছিল, যেখানে মুসলিম নারী ও শিশু ছিল। হাজ্জাজ বিচার চেয়েছিলেন। রাজা দাহির তা অস্বীকার করেন। যুদ্ধ শুরু হয়।
সত্য? একেবারেই ভিন্ন।
- জলদস্যুরা ছিলেন স্বাধীন উপকূলীয় ডাকাত (মেদ সম্প্রদায়), দাহিরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে
- হাজ্জাজ যখন বিচার চাইলেন, দাহির সৎভাবে জানালেন: “ওরা আমার অধীনে নয়, আমি কিছু করতে পারি না।”
এটা ছিল প্রত্যাখ্যান নয়, বরং বাস্তবতা।
কিন্তু হাজ্জাজ প্রতিশোধ এবং সম্পদের জন্য মরিয়া ছিলেন। তাই এই সৎ উত্তরে “বিদ্রোহ”র রঙ লাগিয়ে যুদ্ধের অজুহাত বানান।
আসলে এটি কোনও ধর্মরক্ষার যুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল সোনায় ভরা মন্দির, সমৃদ্ধ বন্দর এবং দুর্বল সীমান্ত দখলের লোভ।
🕍 ৩. কাসিম মন্দিরকে রূপান্তর করেছিলেন মসজিদ ও বাজারে
পাকিস্তানি পাঠ্যবইয়ে বলা হয়—কাসিম হিন্দু ধর্মের প্রতি সহনশীল ছিলেন। সত্যটা কী?
- দেবলে কাসিম বিশাল গুলতি দিয়ে প্রধান মন্দির ভেঙে ফেলেন, পুরোহিতদের হত্যা করেন, এলাকাটি সেনা ঘাঁটিতে রূপান্তর করেন
- মুলতানে আদিত্য সূর্য মন্দির ধ্বংস করেননি, কারণ এটি রাজস্ব আয় করত। তিনি যাত্রীদের উপর কর আরোপ করেন এবং পরে মন্দিরটিকে জামি মসজিদে রূপান্তর করেন
মানে, মন্দির রক্ষা করেননি—লুট করে পরে দখলে নিয়েছিলেন।
ফুতুহুল বুলদানের মতে, মুলতানকে ডাকা হত “সোনার ঘর”—কারণ কাসিমের লুট এতটাই বেশি ছিল।
🤯 ৪. ইসলাম প্রতিষ্ঠা নয়—প্রতিবাদের সূচনা হয়েছিল
মিথ: কাসিম ভারতবর্ষে ইসলাম এনেছিলেন এবং শান্তিপূর্ণ শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
সত্য: তার শাসনকাল ছিল মাত্র তিন বছর।
তার মৃত্যুর পর দাহিরের পুত্র জয়সিংহ আবার এলাকা পুনরুদ্ধার করেন। আরবরা সিন্ধুতে টিকে থাকতে পারেনি। তাদের শাসন ছিল দুর্বল এবং বিদ্রোহে ভরা।
আল-বিলাদুরি লিখেছেন—মুসলিম সেনারা হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলে নিরাপদে চলাফেরা করতে না পারায় নতুন সুরক্ষিত শহর “মাহফুজাহ” গড়ে তোলে।
এমনকি পরে তারা মন্দিরের মূর্তি জিম্মি করে রাজাদের ব্ল্যাকমেল করত—যদি শহর ফিরে পেতে চাও, মূর্তি ভেঙে ফেলব।
এটা কি বীরত্ব?
🧨 ৫. কাসিমের মৃত্যু ছিল নিষ্ঠুর—এবং ন্যায্য
চরম讽刺!
রাজা দাহিরের কন্যাদের খলিফার হারেমে পাঠানোর পর, সুর্য দেবী অভিযোগ করেন—কাসিম তাদের ধর্ষণ করেছে।
ক্রুদ্ধ খলিফা কাসিমকে গরুর চামড়ায় সেলাই করে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
একজন নায়কের মৃত্যু নয়—বরং একজন অস্থায়ী গুণ্ডার শেষ পরিণতি।
讽刺টা? যে ব্যক্তি ইসলাম ভারতে এনেছিলেন, তিনি নিজের খলিফার চোখে অপরাধী ছিলেন।

📖 পাকিস্তানি পাঠ্যবই কী বলে?
পাকিস্তানের নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে লেখা থাকে:
“মুহাম্মদ বিন কাসিম ইসলাম প্রচারে এসেছিলেন। তিনি হিন্দুদের প্রতি সদয় ছিলেন। কর হ্রাস করেছিলেন। হিন্দুদের প্রশাসনে নিয়োগ দিয়েছিলেন।”
আপনি ভাববেন, তিনি বুঝি দাড়িওয়ালা গান্ধী!
তারা যা বলে না:
- তার অভিযানে ছিল ধর্ষণ, দাসত্ব, ধর্মীয় বিদ্বেষ
- তিনি অমুসলিমদের উপর জিজিয়া আরোপ করেছিলেন
- প্রশাসনে কেবল মুসলিম গভর্নর নিয়োগ দেন
- তার শাসন ছিল সামরিক দখল—স্বাগত নয়
এটি ইতিহাস নয়—এটি অলীক হেরোগাথা।
🧠 শেষ কথা: সত্য জানাটা জরুরি
আমরা ইতিহাস বদলাচ্ছি না—আমরা ইতিহাস উদ্ধার করছি।
ভারতে প্রথম মুসলিম আক্রমণ কোনও আধ্যাত্মিক অভিযান ছিল না—এটি ছিল সামরিক অভিযান, ধর্মীয় জেহাদের ছদ্মবেশে লোভী সাম্রাজ্যবাদ।
কাসিম ছিলেন না সংস্কারক। তিনি ছিলেন ধর্ষক, লুণ্ঠনকারী, হত্যাকারী।
কিন্তু এও ছিল এক প্রতিরোধের ইতিহাস:
- দাহির যুদ্ধ করে প্রাণ দেন
- জয়সিংহ আবার উঠে আসেন
- রাজস্থান ও গুজরাটের হিন্দু বীরেরা আরব আক্রমণ ঠেকান
তাই কেউ যদি বলে, “ভারত মুসলিম দখল মেনে নিয়েছিল”—তাকে বলুন, না। আমরা রক্ত ঝরিয়েছি, ভেঙেছি, লড়েছি—আর শেষমেশ নিজের পরিচয় ফিরিয়ে এনেছি।
SIDEBAR: কাসিম আসলে কেন নিহত হয়েছিলেন?
তিনটি তত্ত্ব রয়েছে:
🧕🏽 ১. সূর্য দেবীর প্রতিশোধ (জনপ্রিয়, সন্দেহজনক)
রাজা দাহিরের কন্যারা অভিযোগ করেন কাসিম তাদের ধর্ষণ করেছেন। খলিফা রেগে গরুর চামড়ায় কাসিমকে হত্যা করেন। পরে তারা জানায় তারা মিথ্যা বলেছিল—বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে।
✱ রোমাঞ্চকর? হ্যাঁ
✱ বিশ্বাসযোগ্য? না
✱ উৎস: চাচনামা, ফার্সি উৎস
🗡️ ২. রাজনৈতিক নির্মূল তত্ত্ব (সবচেয়ে বাস্তবসম্মত)
কাসিম হাজ্জাজের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। হাজ্জাজ মারা গেলে, নতুন খলিফা কাসিমকে ঘৃণা করতেন। তাই তাকে ফিরিয়ে এনে চুপিচুপি হত্যা করা হয়।
✱ অনেক ইতিহাসবিদ এটিকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব মনে করেন।
💸 ৩. দুর্নীতি তত্ত্ব (সবচেয়ে দুর্বল)
কিছু fringe সূত্র বলে কাসিম অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন। কিন্তু প্রমাণ নেই🎭 উপসংহার:
কাসিম নায়ক হিসেবে মারা যাননি—তিনি ছিলেন একটি সাম্রাজ্যিক খেলার মরা ঘুঁটি।
🔗 আরও পড়ুন:
👉ভারতের-প্রথম-মুসলিম-আক্র
Al-Baladhuri’s translated work
📢 ইতিহাস জানুন। সত্য ছড়ান।