চীনের লুনার নিউ ইয়ার কালে টিয়ানজিনের এক সুপারমার্কেটে দেখা যায়—গ্রাহকেরা সুলভ দামে চিলির চেরি কিনছে। একসময় বিলাসিতা হিসেবে গণ্য, আজ চেরি হয়ে উঠেছে দেশের খরচ সংকটের প্রতীক।
চীনের সাথে ফলে শুধু পুষ্টিগত নয়, বরং সাংস্কৃতিক সংযোগও রয়েছে। উজ্জ্বল নাড়িন্ডর কি প্রচুর সমৃদ্ধির প্রতীক, পীচ দেয় দীর্ঘায়ু—এগুলো ফলকেন্দ্রিক উদযাপনের মূল উপকরণ। নববর্ষে দানের বাস্কেটগুলোতে প্রশান্তির জন্য সেপেল আপেল আর সৌভাগ্যের জন্য সোনালী কমলা রাখা হয়। পূজা বা স্মশানে ফলের অর্পণ করা হয় আশীর্বাদের জন্য। অর্থাৎ চীনে ফল খাবার নয়—এটা সাংস্কৃতিক এক ‘চিনিহারা’।
কিন্তু সম্প্রতি সেই চিনিহারার স্বাদ হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী সমৃদ্ধ ফসলের পর, আধুনিক চীনের ফল বাজার যেন ধীরে ধীরে ‘রস’ হারাচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দা, বদলানোর উপভোক্তা অভ্যাস, ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ—এর ফলে অনেক ফলের মতো বাজারেও তাজা ফলের চাহিদা কমে যাচ্ছে। চকচকে আপেল, বড় আকারের আঙ্গুর—সবই এখন বর্ণহীন সংকেত পাঠাচ্ছে চীনের অর্থনীতির বিষণ্নতার।

বাগান থেকে বাজারে: ফলের জনপ্রিয়তা হারানো
আগে চীন ফল উৎপাদনে বিশ্বতালিকার সামনে ছিল। ২০২১ সালে দেশজুড়ে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন টন ফল উৎপাদিত হয়েছিল। কিন্তু সব উত্পাদন বাজারে যাওয়া মানে কিন্তু চাহিদার পূর্ণতা নয়। বছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন টন ফল নষ্ট হয়! প্রচুর সরবরাহ সত্ত্বেও ফল বিক্রি না হয়ে শূকরছানার খাবার বা বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। কী ঘটছে এই ফলরাজ্যে?
মানের অভাব
খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত স্ক্যান্ডাল, কীটনাশক ও সংরক্ষণকারী ব্যবহারের খবরের কারণে ক্রেতাদের আস্থা ভাঙছে। উদাহরণস্বরূপ, এক চাষি দাবি করেন—একই মৌসুমে আঙুরের ২৪বার কীটনাশক স্প্রে হয়। এমনকি সাংগঠনিক ফলও রয়েছে—যেমন “সানশাইন রোজ” আঙুরের ২৪টিতে ২৩টিতে অবৈধ উপাদান পাওয়া গেছে। মোমে লেপানো কমলা, গ্রোথ-হরমোনযুক্ত স্ট্রবেরি—“ফ্রাঙ্কেন-ফল” বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম জুড়ে সুখ্যাতি ছড়িয়েছে। এতক্ষণে ক্রেতারা ফলকে “অমর” বলতে শুরু করেছে—কারণ তারা নষ্ট হচ্ছেনা!
খরচ-সচেতনতা ও ‘কনজাম্পশন ডিগ্রেড’
খরচ কমানোর জন্য ফলকেও ত্যাগ করা হচ্ছে। ‘Cherry Freedom’—এই ফ্রেজটি বিদেশী চেরি কেনার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ২০২৫-এর শুরুর দিকে শিলির চেরির অতিপ্রচুর সাপ্লাই প্রাইস ৭০ % পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। সাধারণ ক্রেতার হাতের নাগালের মধ্যে পড়ে যায় ৩০-ইউয়ানের অর্ধেক কেজি চেরি; এই সস্তা ফল কৃষকদের মুখে বিষ নিয়ে এনেছে।
ডেটাতে ফলের বিধ্বস্ত চিত্র
- ২০২৪ সালে ফল খাওয়ার পরিমাণ বিগত দশকের ধারাবাহিক বৃদ্ধির বিপরীতে প্রায় ১% কমে যায় (২৬৫ মিলিয়ন টন)।
- আয় অনুযায়ী ফল বিক্রি ৫ %-এরও বেশি কমে যায়, যা বাজারের অবস্থার আরও গম্ভীরতা নির্দেশ করে।
- আন্তঃপ্রদেশীয় সরবরাহে ফল অর্ধেক খালি, বাকিটা পর্যন্ত বাদাবাকি ফলে পড়েছে।
- বেশ কিছু এলাকার হোলসেল দাম এতটাই পড়ে যায় যে সার-খাদ্য খরচও পুষিয়ে না।
চীনের “রট” হল ফল = অর্থনৈতিক সংকট
ফল ক্রয় না হওয়া মানে ক্রেতার ভয়—গাড়ি, গৃহ, যন্ত্রপাতি সবই হয়তো একই পরিস্থিতিতে আছে। এমন পরিস্থিতিতে বিক্রয় বাড়ানোরজন্যে সরকার প্রচার চালাচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাস অনুযায়ী ফল খাওয়া “দেশপ্রেমিক কর্তব্য” হিসেবে উপস্থাপিত। তবে খরচ সচেতনতা সহজে ঝেড়ে ফেলা যায় না।
স্বাস্থ্য ও সামাজিক রেফরম
ফল খাওয়ার অভাব স্বাস্থ্যের দিক থেকেও ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি বৃদ্ধিতে সহায়ক। নিরাপত্তা উদ্বেগ বিষয়টিকে গুরুত্ব পেতে পারে—অতিরিক্ত কীটনাশক বা জাল খাদ্য—জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। ফল-খামারেও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ জোরদার হতে পারে।
গ্রামীণ ও কৃষি অর্থনীতি পণ্যের অস্থিতিশীলতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এর ফলে মেঘাচ্ছন্ন সামাজিক যুদ্ধাবস্থা হতে পারে। সরকার কিছুটা ফল কিনে নিতেও শুরু করেছে এবং “farm-to-table” ই-কমার্সে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক প্রভাব
চীনের ফল বাজারের অবনতি প্রতিবেশী এবং রপ্তানিকারক দেশে ক্ষতি করছে। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনাম-রফতানিতে প্রায় ৩৯% পতন ঘটেছে। অন্যদিকে, চিলি বা থাইল্যান্ডের মতো দেশ থেকে সস্তা আমদানি হওয়া অর্থনীতি অন্য স্থানেও পরিবর্তন আনছে। তবে এর সুযোগ হিসেবেও দেখা যেতে পারে—বিশেষ করে উচ্চমানের আমদানি ফলের জন্য—ভারত সহজ মধ্যবর্তী প্রোভাইডার হিসেবে উঠে আসতে পারে।
ভারত-ওয়ার্ল্ড পুস্টার: SWOT ফ্রেমওয়ার্ক
প্রকৃতি | বাংলাদেশী ও আন্তর্জাতিক প্রতিফলন |
---|---|
শক্তি | চীনের প্রেক্ষাপটে ভারতীয় রপ্তানিকারীদের সুযোগ, আমদানি খরচে উপকারীতা |
দুর্বলতা | চীনের অবনতি অন্যান্য কৃষি বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে |
সুযোগ | ভারত নিরাপদ খাদ্য পদ্ধতি, পাইকারি বাজার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী হয়ে উঠতে পারে |
ঝুঁকি | ক্রমশ কমতে থাকা চীনা চাহিদা বিশ্ব বাণিজ্যে বিক্রমহীনতা আনতে পারে |
শেষ কথা—চীনের ফল শুধু শারীরিকভাবে নষ্ট হচ্ছে না, বরঞ্চ অর্থনৈতিক সংকটের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত। আপেল বা পীচ নষ্ট হলেও, ‘কল্ড ফসল’ এখন পরিণত হয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক মন্দার পথে। তবে এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে চীন যদি সুষ্ঠু পদ্ধতি অবলম্বন করে, তবে হয়তো এর চেয়ে বড় সুযোগ তৈরি হতে পারে। যদিও আজ ফলের বাগান বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও—ফল এবং অর্থনীতির দুটোই আবার তাজা হতে পারে, এক প্রবল সংকট-পরবর্তী উন্নতির মাধ্যমে।
📌 আরও পড়ুন:
🗞️ “কানাডায় খালিস্তান আন্দোলন: কেন ভারতের উচিত কানাডাকে কড়া ভাষায় সতর্ক করা”
একটি তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ—কানাডার দ্বিচারিতা ও বিদেশী ভিত্তিতে পোষিত সন্ত্রাসবাদের যুদ্ধরূপ নিয়ে।