Thursday, 22 May 2025
  • Home  
  • কাসিমকে ঢুকতে দিল যিনি: এক নৌকার মাঝি ও এক সভ্যতার বিশ্বাসঘাতকতা
- Bangla Article

কাসিমকে ঢুকতে দিল যিনি: এক নৌকার মাঝি ও এক সভ্যতার বিশ্বাসঘাতকতা

প্রস্তাবনা: আমি ছিলাম, আর আমি হেসে গিয়েছিলাম হ্যাঁ, আমি সেই ভাঁড়। কালহান কুটিল, রাজা দাহিরের দরবারের অফিসিয়াল বিনোদনদাতা। আমি রসিকতা করতাম, মদ ঢালতাম, আর যারা প্রাপ্য, তাদের উপহাস করতাম। এই গল্প এক মাঝির, যে কাসিমকে নদী পার করিয়ে দিল। যখন মুহম্মদ বিন কাসিম ইন্দুস পেরিয়ে ঢুকে পড়ল, আমি আর হাসতে পারিনি। তার বদলে স্মৃতিতে ফিরে […]

প্রস্তাবনা: আমি ছিলাম, আর আমি হেসে গিয়েছিলাম

হ্যাঁ, আমি সেই ভাঁড়। কালহান কুটিল, রাজা দাহিরের দরবারের অফিসিয়াল বিনোদনদাতা। আমি রসিকতা করতাম, মদ ঢালতাম, আর যারা প্রাপ্য, তাদের উপহাস করতাম।

এই গল্প এক মাঝির, যে কাসিমকে নদী পার করিয়ে দিল।

যখন মুহম্মদ বিন কাসিম ইন্দুস পেরিয়ে ঢুকে পড়ল, আমি আর হাসতে পারিনি। তার বদলে স্মৃতিতে ফিরে গেলাম। আর এখন, আমি লিখছি।

এটা কোনো বীরযুদ্ধের কাহিনি নয়। এটা এক ব্যক্তির, এক নৌকার, আর এক বিশ্বাসঘাতক চুক্তির গল্প, যা খুলে দিলো এক সভ্যতার দরজা। আর না, এটা ঈশ্বরের জন্য ছিল না—এটা ছিল সোনার জন্য।

স্বাগতম, এক মাঝির শয়তানের সাথে চুক্তির ইতিহাসে।

আগুনে ডুবে যাওয়ার আগে সিন্ধ

৭১২ খ্রিষ্টাব্দের আগে সিন্ধ ছিল না কোনো পশুচারণকারী, পশ্চাৎপদ এলাকা—যেমন করে আক্রমণকারীরা দেখাতে চায়। এটা ছিল মন্দির ও বাণিজ্যের ভূমি, সহিষ্ণুতা ও শাস্ত্রের, বিতর্ক ও ধর্মের।

এখানে ছিল বৌদ্ধ বিহার, শৈব মন্দির আর ব্রাহ্মণদের পাঠশালা।

আর ছিল রাজা দাহির—এক পণ্ডিত রাজা, যিনি বই পুড়িয়ে নয়, পড়ে শাসন করতেন। তিনি ছিলেন না সিন্ধের শেষ রাজা।

তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম রাজা, যিনি এক ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন—যার মতে ধর্মান্তরই শান্তি, জিজিয়া করই ন্যায়, আর মন্দির ধ্বংসই কূটনীতি।

Painting depicting the boatman who let Qasim in
Painting depicting the boatman who let Qasim in

মাঝি যে কাসিমকে ঢুকতে দিল: মোকা বাসায়ার বিশ্বাসঘাতকতা

অনেকে ভাবে সিন্ধের পতন শুরু হয়েছিল এক সেনাবাহিনী দিয়ে। ভুল।

এটা শুরু হয়েছিল মোকা বাসায়া নামের এক বৌদ্ধ রাজপুত্রের মাধ্যমে, যে মুহম্মদ বিন কাসিমকে বলেছিল:
“চল, আমার নৌকায় ওঠো। কেবল কিছু জমি আমাকে দিয়ে দিও, ঠিক আছে?”

এটা কোনো গল্প নয়। এটা চাচনামাতে লেখা আছে—সিন্ধ জয়ের পারস্য ভাষার ইতিহাস, যা অনুবাদ করেছিলেন এইচ. এম. এলিয়ট।

“মোকা বাসায়া আরবদের অনুগ্রহ পেতে চেয়েছিলেন এবং মুহম্মদ বিন কাসিমকে নদী পার হবার পথ ও নৌকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।”
চাচনামা, অনুবাদ: এলিয়ট ও ডাউসন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৫৯

এক বিশ্বাসঘাতক। এক নদীপথ। এক রাতের নৌকা বাওয়া।

সকালে, সিন্ধ রক্তে ভেসে গিয়েছিল।

কাসিমের উট বাহিনী এলো—ঠোঁটে ঈশ্বর, চোখে রক্ত

মুহম্মদ বিন কাসিম শান্তিচুক্তি নিয়ে আসেননি। তিনি এনেছিলেন যুদ্ধযন্ত্র আর কোরআনের সূরা।

আর ইন্দুস পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই—মোকার নৌকায় চেপে—তিনি খুলে দিলেন ধর্মীয় সন্ত্রাসের দুয়ার।

তিনি মন্দিরের প্রতি করুণা দেখাননি।
শিশুরাও রেহাই পায়নি।

দেবালে তিনি ধ্বংস করলেন প্রধান মন্দির, পুরোহিতদের হত্যা করলেন, আর নারীদের দাসত্বে পাঠালেন—”তার সৈন্যদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন”—চাচনামাতে এমনটাই গর্বের সঙ্গে লেখা আছে।

“মুহম্মদ বিন কাসিম আদেশ দিলেন মূর্তিটি ভেঙে ফেলার ও সেই জায়গায় একটি মসজিদ গড়ে তোলার।”
চাচনামা, পৃষ্ঠা ১৭৬

তার যুক্তি কী ছিল?

কেবল কোরআন ৯:২৯ আর ইরাকের গভর্নর আল-হজ্জাজের নির্দেশ:

“যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, তাদের হত্যা করো… যতক্ষণ না তারা জিজিয়া কর দেয় বিনীতভাবে।”

এটা দখল নয়।

এটা ছিল সংগঠিত ধর্মীয় নিধন—ঈশ্বরের নামে মোড়ানো।

কাসিমকে ঢুকতে দিয়েছিল যে মাঝি, সে পেল এক শহর। আমরা পেলাম মৃত্যু।

হ্যাঁ, মোকা বাসায়া পুরস্কৃত হয়েছিল।

চাচনামা অনুসারে, তাকে নিয়ন্ত্রিত এলাকা দেয়া হয়েছিল। সে হল “গভর্নর”, নতুন ইসলামী শাসনের অধীনে—সম্পত্তি, রক্ষাকবচসহ।

আর আমাদের সেনারা?

তাদের গুঁতিয়ে মারা হয়েছিল।
আমাদের কন্যাদের শৃঙ্খল পরানো হয়েছিল।

এভাবেই সভ্যতা ধ্বংস হয়—ঝড়ে নয়, বিক্রিতে।

রাজা দাহির: শেষ রাজা নয়, প্রথম প্রতিরোধকারী

সত্যি বলতে গেলে, রাজা দাহির ভারতের শেষ প্রতিরক্ষা ছিলেন না। তিনি ছিলেন প্রথম বিদ্রোহের আর্তনাদ।

যখন অন্য রাজারা নিজেদের রাজনীতি আর অর্থের হিসাব কষছিল, দাহির একাই দাঁড়িয়েছিলেন—এক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে, যা কেবল ভূখণ্ড দখল করছিল না, বরং এক ঈশ্বর রপ্তানি করছিল, যিনি ভক্তি নয়, আত্মসমর্পণ দাবি করতেন।

যখন তিনি শেষ যুদ্ধে অরোর শহরে যাত্রা করলেন, তিনি জানতেন যে তিনি সংখ্যায় কম।

কিন্তু তিনিও জানতেন আত্মসমর্পণ মৃত্যু অপেক্ষাও খারাপ।

আর যখন তিনি নিহত হলেন—তার কাটা মস্তক দামেস্কে পাঠানো হল—তিনি কেবল মারা গেলেন না। তিনি কিংবদন্তিতে রূপান্তরিত হলেন।

ভাঁড়ের স্মৃতিতে সেই রাত

আমি সেই রাতের কথা মনে রেখেছি, যেদিন তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন।

তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন, হাতে মদের গ্লাস।

“কালহান,” বললেন, “একটি কবিতা লেখো, যা লোকেরা মনে রাখবে যখন আমি আর থাকব না।”

আমি হাসলাম। “আমি মৃতদের জন্য কবিতা লিখি না।”

তিনি মুচকি হেসে বললেন, “তবে তোমার সন্তানদের জন্য লিখো।”

তাই এই কবিতা:

“এক রাজা সত্য হাতে দাঁড়িয়ে ছিল, যখন মাঝিরা চুপিচুপি বালি কেটে যাচ্ছিল।
সে পড়ে গেল ধর্মান্ধের অভিশপ্ত শ্বাসে,
কিন্তু মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি জীবন অর্জন করল।”

Qasim and destruction of Sindh
Qasim and destruction of Sindh

কেন কাসিমকে ঢুকতে দেয়া মাঝির কাহিনি বলা জরুরি?

পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে আজও লেখা আছে—কাসিম নাকি ন্যায় ও শৃঙ্খলা এনেছিল।

ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীরা এখনো এই দখলদারিকে তার আসল নামে ডাকে না—জিহাদ।

এখনও কোথাও না কোথাও, আরেক মোকা বাসায়া কলম ধার দিচ্ছে, বিশ্বাসঘাতকতাকে “বাস্তবতা” বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

আর কাসিম?

সে যেমন জন্মেছিল, তেমনি মরেছিল—এক আদর্শের জন্য, যা শেষে তাকেই ত্যাগ করেছিল।

রাজা দাহিরের কন্যাদের খলিফার কাছে “উপহার” হিসেবে পাঠানোর পর, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে—তাদের কলঙ্কিত করার।

রাগে খলিফা আদেশ দেয়—কাসিমকে গরুর চামড়ায় সেলাই করে দম বন্ধ করে হত্যা করতে।

“তার মৃতদেহ, গরুর চামড়ার ভেতরে, ইরাকে পাঠানো হয়, কিন্তু গন্ধে পচে যায় পথেই।”
চাচনামা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৮৭

না ছিল তলোয়ারের সম্মান, না ছিল পতাকা।

শুধু নীরবতা। আর এক নির্মম ন্যায়বিচারের দুর্গন্ধ।

উপসংহার: প্রতিটি সভ্যতার পতন শুরু হয় এক মাঝির বৈঠা দিয়ে

আমরা ভাবি বিজয় মানে বীরত্বের লড়াই।

কিন্তু কখনো তা হয় নীরবে।

একটি ফিসফাস। একটি চুক্তি। অন্ধকারে ভেসে চলা এক নৌকা।

এই কারণেই এই কাহিনিটি জরুরি।

কারণ প্রতিটি যুগে থাকে—একজন কাসিম, একজন মোকা, আর একজন দাহির।

আমরা কার মতো হবো—এইটুকুই এখনও ইতিহাসে লেখা হয়নি।

Leave a comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

About Us

India Insight Hub is your trusted source for insightful analysis on India’s rise, covering geopolitics, AI, technology, history, and culture. We bring bold perspectives on India’s influence in the modern world.

📌 Discover more: 👉 About Us

Email Us: [email protected]

Contact: +91 – 73888 12068

ArtiTude @2025. All Rights Reserved.