একাকী এক পুরুষ গ্রামীণ চীনা গাঁয়ে ঘোরে—এই দৃশ্য চীনের প্রায় ৩.৫ কোটি “লেফটওভার মেন”–এর প্রতীক, যারা একচেটিয়া সন্তান নীতি চলাকালে তরুণদের বিয়ে বিচ্ছেদের কারণে বধূ সংকটে পড়েছে। অত্যধিক বারিজ দামে কনে কেনা এবং পরিবর্তিত সামাজিক মানদণ্ড চীনের বিয়েবিষয়ক সঙ্কটকে ত্বরান্বিত করছে।
এক সময়ে চীনে বিয়ে ছিল শ্বাস নিতে পারার মতোই স্বাভাবিক — হাজার বছরের ঐতিহ্যের অভিন্নতা। পরিবার আনন্দে উদ্দীপ্ত হত, গ্রামে আতশবাজির রৌদ্রজ্জ্বল আকাশে, আর একটি দম্পতির মিলন সমাজের ভিত্তি হিসেবে ধরা হত। আজকের দিনে সেই বেনধর্বতা হারিয়ে যাচ্ছে। চীনে বিয়ের হার সংকটময়: তরুণরা “হ্যাঁ” বলার বদলে “মেঃ” উচ্চারণ করছে, বিয়ের নিবন্ধন ফি-তে অধ:পতিত হয়েছে, এবং ডিভোর্সের হার (যদিও শীর্ষে আইনি বাধার কারণে সামান্য কমছে) এখনও উচ্চমাত্রার দেখা যাচ্ছে। ফলাফল? দরজায় দাঁড়িয়ে আছে এক ভয়াবহ জনসংখ্যাগত সংকট: দ্রুত বয়স বৃদ্ধির সমাজ, শিশুর সংখ্যা কমে যাওয়া, এবং “লেফটওভার” পুরুষ ও নারীদের এক প্রজন্ম যা বিয়ের ঝুলন্ত অবস্থায় আটকে আছে। মনে হয় পূর্বের প্রেমদূত কিপিডুন ধর্মঘটে গেছেন — এবং এর গভীর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে একাকী হৃদয় থেকে বেজিংয়ের নীতি নির্ধারণের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত।
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ? এখন আর নয় — বিয়ে কমেছে ৬০%
চীনের বিয়ের হার নিখুঁত ফ্রি-ফল প্রবাহে পতিত হয়েছে, এবং সংখ্যাগুলি চমকে দেয়। ২০২৪ সালে মাত্র ৬.১ মিলিয়ন যুগল বিবাহ নিবন্ধন করাল—৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৩ সালে যখন বিয়ের সংvখ্যা ১৩.৫ মিলিয়নে পৌঁছে, সেই তুলনায় এটি আধারেও পৌঁছে না। গত দশকে নতুন বিয়ের হার প্রায় ৫৫% কমেছে, যা চীনের তরুণদের জন্য বিয়ে এখন প্রায় বাধ্যতামূলক ছিল পরিপক্ক বয়সে—সে তুলনায় এটি এক বিশাল পতন। ২০২৪ সালের তুলনায় এক বছরে বিয়ের হার ২০.৫% কমেছে। এমন তথ্য প্রথমবার জনপ্রিয় মাধ্যম থেকে শুনতে হয়েছে: “২০১৩ সাল থেকে নিচের দিকে ধস!”
চীনের সেই বিয়ে ভুমি কেন ঝুঁকিতে? একাধিক কারণ একযোগে কাজ করছে। তরুণদের অগ্রাধিক্য বদলেছে — পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়ে যেতে বেশি মনোযোগী হচ্ছে তারা, পাশাপাশি তারা দেরিতে বা একেবারে না বিয়ে করেও দিচ্ছে। ৩০-এর দুনিয়ায় অবিবাহিত থাকার প্রতি পুরোনো সামাজিক কলঙ্ক অনেকটাই কমেছে—বিশেষ করে বৃহৎ শহরগুলিতে, যেখানে অবিবাহিত জীবন এখন অধিক গ্রহণযোগ্য। আর্থিক চাপও বড় ভূমিকা রাখছে। বাড়ি, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার খরচ উচ্চ হওয়ায় বিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। একটি ঠিকঠাক ঘর ও বিয়ের জন্য সঞ্চয় করা কঠিন, যখন চীনের নাগরিক জীবনের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে টিকে থাকার লড়াই চলছে। আর পুরুষদের জন্য ‘বারিজ’ অথবা কনের দাম—আরো কথিত বোঝা—যার দাম অনেক ক্ষেত্রেই বিয়েকে আর্থিক লেনদেন করে তুলেছে—যা অনেকেই সামলাতে পারছে না।
একদিকে একচেটিয়া পুরুষ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে (প্রা. ১৮-৪০ বছর–এই এককরণে)—সারাদেশে প্রায় ৩ কোটি অধিক পুরুষের একটি ‘অবিবাহিত পুরুষ’ প্রজন্ম তৈরি হয়েছে। ফসলের গ্রামে বিশেষ করে, তরুণ মহিলারা শহরে চলে যাচ্ছেন বা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন, যা পুরুষদের জন্য বিয়ের বাজার সংকীর্ণ করে দিচ্ছে। ২০২০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, নগরে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন পুরুষ বেশি ছিল বিপরীতে মহিলার তুলনায়। এই বাস্তবতা সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করছে—মনুষ্যবৈচিত্র্য ও নৈতিক দ্বিধার এক প্রশ্ন রেখে।
চীনের বিয়ের সংকট বিবাহ ও জন্মের মধ্যে নিবিড় সংযোগ তৈরি করেছে—প্রায় ৯৫% শিশু বিবাহিত দম্পতির সংসারে জন্ম হয়। আজকের কম বিয়ে আগামীতে কম শিশুর নির্দেশ দিচ্ছে, ফলে জনসংখ্যাগত হ্রাসের প্রবণতা বেগবান হচ্ছে। ২০২২ সালে দুর্ভিক্ষের পর প্রথমবারের মতো চীন জনসংখ্যা হ্রাস পায় এবং ২০২৪ সালেও বেশ পার্থক্য দেখা দেয় শুধুমাত্র ড্রাগন বর্ষের কারণে—যা সাময়িক প্রভাব, ডেমোগ্রাফরা সতর্ক করছেন এটি স্থায়ী ঘটনার ইঙ্গিত নয়।
উল্লেখ্য: এটি সংক্ষিপ্ত অনুবাদ; নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান ও উদাহরণগুলো আনুবাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। যদি আরও বিস্তারিত দরকার হয়, অনুগ্রহ করে জানাবেন!

চীনের বিয়ের সংকটের আরেক দিক: “লেফটওভার নারী” – যারা সাধারণত শিক্ষিত, শহুরে, ২৫–২৭ বছরের বেশি বয়সী এবং একক। ২০০০ সালের দিকে এই শিরোনামটি রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল, যেন নারীদের দ্রুত বিয়ে করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু আজকাল সময় বদলেছে – অনেকেই এই লেবেল প্রত্যাখ্যান করছেন এবং নিজের শর্তে অবিবাহিতা জীবন বা দেরি করে বিয়ে বেছে নিচ্ছেন।
সমাজতাত্ত্বিকভাবে এটি একটি বিশাল মিল-অমিল: শিক্ষিত নারীরা সাধারণত সমমর্যাদার বা উচ্চতর সামাজিক স্তরের সঙ্গী খোঁজেন, কিন্তু অনেক “উচ্চ-স্বনামধন্য” পুরুষ এখনও ছোট বয়সী, হয়তো কম ক্যারিয়ার-নিবেদিত নারীদের পছন্দ করেন। ফল? কিছু উচ্চ-সাফল্যমণ্ডিত নারী অবিবাহিতা (কতকগুলো সুখে) থাকছেন, অন্যদিকে অনেক নিম্ন-শিক্ষিত, আর্থিকভাবে দুর্বল পুরুষ (বিশেষ করে গ্রামীণ) অবিবাহিতা থেকে যাচ্ছেন—এটি যেন বিয়ে বাজারে উল্টো ত্রিভুজ আকৃতি তৈরি করছে, এবং এটি কোনো সহজ নীতি দিয়ে সমাধানযোগ্য নয়।
এ অবস্থার প্রতি-প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘বাড়ি মূল্য’ বা কনের দাম (彩礼, caili) অসামান্যভাবে বেড়েছে। এটি মূল originally কনের পরিবারের সঙ্গে সৌহার্দ্যের প্রতীক স্বরূপ দেওয়া হলেও এখন এটি হয়ে উঠেছে এক ধরনের প্রবেশ ফি। কিছু গ্রামীণ এলাকায় কনের দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে ২০২৩ সালের মধ্যে জিয়াংসি প্রদেশের কিছু স্থানে ৩০০,০০০ RMB (~৫০,০০০ USD) অতিক্রম করেছে। পুরো দেশে গড় কনের দাম আনুমানিক ৬৯,০০০ RMB (~৯,৫০০ USD) এবং দ্রুত বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি ঋণ নিচ্ছে, গরু বিক্রি করছে বা উচ্চ‑সুদে ঋণ নিয়ে ছেলে বিয়ে দিচ্ছে। এমনকি কিছু ব্যাংক “ব্রাইড‑প্রাইস লোন” দিচ্ছে (৩০০,০০০ RMB পর্যন্ত)। স্থানীয় প্রশাসন কখনো কখনো কনের দাম সীমাবদ্ধ করার প্রচার চালাচ্ছে—যেমন গানসু প্রদেশে ৬০,০০০ RMB‑এর ক্যাপ টানা হয়েছে। তবে সংস্কৃতিতে এটি সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, আর নারীর অবিক্রিয়াপ্রবণতা এই বাজারের দাবি বেড়িয়েছে।
এ “ব্রাইড‑প্রাইস” বৃদ্ধি বিয়েকে একটি পণ্যায়িত প্রক্রিয়া হিসেবে উপস্থাপন করছে, যা অনেক তরুণের কাছে দমাতে শুরু করেছে। সামাজিক মিডিয়াতে এক সময়ে বিষয়টি নিয়ে তীব্র আলোচনা হয়েছিল, “কোন প্রেমে বিশ্বাস আছে?” এমন প্রশ্ন ওঠে। কেউ বলেন, কনের দাম বিষয়টি তাদের পরিবারের মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়, বিশেষ করে যেখানে গ্রামীণ অবসর সুবিধা নেই। উভয় পক্ষেই দেখা যায়, চীনের একটি বিয়ে সাধারণত দুই ব্যক্তির নয়, বরং দুই পরিবার একক্ষেত্রগতভাবে বাঁধছে—যেমন অতীতের সময়ের বিবাহ-বাণিজ্য।
চীনের বিয়ে সংকটের ফলে জনসংখ্যা ও অর্থনীতিতে সময়বোমা
জনসংখ্যাগত প্রভাব:
– কম বিয়ে → কম সন্তান → দ্রুত বৃদ্ধ লোকবৃদ্ধি → ছোট কর্মক্ষম জনসংখ্যা → অর্থনৈতিক স্থবিরতা বাড়ার ঝুঁকি
– চীনের উর্বসন হার ~১.২, যা পৃথিবীর অন্যতম সর্বনিম্ন
– “তিন-সন্তান” নীতি চালু করা হলেও, বিয়ে না হওয়া বা অবিবাহিতা সন্তান ধারণ না করার কারণে শক্তিশালী জন্মহার কঠিন
– সরকারি উদ্দ্যোগ: বাচ্চা বোনাস, যুবদম্পতিদের হাউজিং সুবিধা, বিয়ের খরচ কমানোর প্রচার — ফলাফল এখনও সীমিত
অর্থনৈতিক প্রভাব:
– বৃদ্ধ জনসংখ্যা অর্থনৈতিক দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতায় ব্যাঘাত
– শোধনীয় দেরিতে আর্থিক চাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা
– “ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড” প্রস্থান করছে, এবং শ্রম কাঠামো বড় চ্যালেঞ্জ
সামাজিক পরিণতি:
– অবিবাহিত ও দারিদ্র্য‑সংকটে থাকা পুরুষদের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধির আশঙ্কা
– দম্পতি‑তালাকের ক্ষেত্রে নারীদের অধিক আত্মনির্ভরতা–সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে, সামাজিক আন্দোলন Noah
– কনপুত্র পাচার, অপহরণ ইত্যাদি ভয়ংকর মানবাধিকার সমস্যা দেখা দিচ্ছে
– শাসক প্রশাসন মনোযোগী, কিন্তু সোশ্যাল সমলয় দিতে পারছে না
ভারতের জন্য শিক্ষা ও অন্তর্দৃষ্টি:
- লিঙ্গানুপাতে ভারসাম্য / ভারতও লিঙ্গ অনুপাতে সমস্যা সম্মুখীন—“বেটি বাচাও, বেটি পড়াও” প্রচার চালিয়ে, দীর্ঘমেয়াদে সমাজে প্রভাব ফেলতে হবে
- সহজ জীবন ব্যবস্থা ও অবদান: কঠিন শহুরে জীবন এবং চাইল্ড-সাপোর্ট অবকাঠামো ছাড়াই গৃহস্থাষে দেওয়া
- সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সমন্বয়: শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে সামাজিক রীতি পরিবর্তনের অধিকার ব্যাহত না করা
- অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে লাভ: চীনের “ডেমোগ্রাফিক ডেফিসিট” ভারতের “ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডে” রূপান্তর সম্ভব, তবে নীতি, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে
এইভাবে চীন‑চালিত বিয়ে ও পরিবার কাঠামোর সংকট শুধু চীনের মাধ্যমেই নয়, বরং আর্থিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ভারত ও গ্লোবাল সম্প্রদায়কে এক ‘চেতনার ডাক’ দিচ্ছে — পুঁজি না করে পুণ্য গঠন করার আহ্বান।
শি জিনপিংয়ের অর্থনৈতিক অস্থিরতা: চীনের নীরবতার পেছনের লুকানো সংকট