আল্লাহ বনাম বিবর্তন: প্রমাণ যেখানে মৃত্যুদণ্ড পায়
ভাবুন আপনি একটি গবেষণাগারে ঢুকলেন, একটি মাইক্রোস্কোপের নিচে তাকালেন, এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে জীবন কোটি কোটি বছরে বিবর্তিত হয়েছে। এবার ভাবুন আপনি একটি মসজিদে গিয়ে একই কথা বললেন—এবং এরপর আপনার মাথার উপর ফতোয়া জারি হলো। স্বাগতম ইসলামের সাথে বিবর্তনের সেই অন্তহীন টানাটানির যুদ্ধে, যেখানে পরীক্ষাযোগ্য সত্যকে ধর্মদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য করা হয়।
জেনেসিস, কিন্তু আরবিতে
চলুন মূল বিষয় দিয়ে শুরু করি। ইসলাম, তার আব্রাহামিক আত্মীয়দের মতো, বিশ্বাস করে যে আদমকে কাদা থেকে এবং হাওয়াকে তার পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কোনো রূপক নয়। কোনো বিবর্তন নয়। শুধু আল্লাহর মডেলিং ক্লে।
কুরআনে বলা হয়েছে, মানুষ “একটি জমাট রক্ত থেকে” এবং “সুশৃঙ্খল রূপে” সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও বানরের উল্লেখ নেই, কোনো জিন-পুল নেই, এবং নিশ্চয়ই কোনো মিউটেশন নেই। ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অনুযায়ী, আপনি আল্লাহর হাতে তৈরি, প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধীর, অন্ধ প্রক্রিয়ায় নয়।
এটা বিশ্বাস নয়। এটা জীববিজ্ঞানের রূপকথা।
আল্লাহ বনাম শিক্ষা ব্যবস্থায় বিবর্তন: বই পোড়াও, বিশ্বাস বাঁচাও
অনেক ইসলামিক দেশে বিবর্তনকে রেডিওঅ্যাকটিভ কিছু হিসেবে গণ্য করা হয়। পাকিস্তানে, জীববিজ্ঞান বই থেকে পুরো অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবে বিবর্তনকে “পশ্চিমা তত্ত্ব” হিসেবে চিত্রিত করা হয় যা ইসলামী মূল্যবোধকে ধ্বংস করে।
তুরস্ক, একসময়ের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি, ২০১৭ সালে মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম থেকে বিবর্তন বাদ দিয়েছিল।
কেন? কারণ বিজ্ঞান অনুমতির অপেক্ষা করে না। বিজ্ঞান বলে না, “আচ্ছা, ধর্মগ্রন্থকে বিরক্ত না করি।” বিজ্ঞান বলে, “ডেটা দেখাও।” আর ডেটা যদি ধর্মকে অস্বীকার করে, তাহলে ডেটা নয়, বিজ্ঞানী বাদ পড়ে।

ইসলাম কেন ডারউইনকে (এবং ডিএনএকে) ঘৃণা করে
সমস্যা শুধু বিবর্তন নয়। সমস্যা বিজ্ঞানের মূল চেতনার সাথে—জিজ্ঞাসা, সংশয়, পরীক্ষা, পরিবর্তন। ইসলাম, বিপরীতে, বিশ্বাস করে নিশ্চিততা, আনুগত্য, বিধান ও সংরক্ষণে।
বিবর্তন এলোমেলোতা বোঝায়। ইসলাম নকশা চায়।
বিজ্ঞান ব্যর্থতা গ্রহণ করে। ইসলাম সংশয় শাস্তি দেয়।
বিজ্ঞানীরা তত্ত্ব সংশোধন করে। ইমামরা ধর্মীয় রীতিনীতি দৃঢ় করে।
আসলে, বিবর্তন আল্লাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে—অথবা অন্তত তাঁকে অবান্তর করে তোলে। এটাকে ধর্মীয় বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হয়।
“কিন্তু ইসলামিক গোল্ডেন এজে তো বিজ্ঞান ছিল?”
হ্যাঁ, ছিল। কিন্তু পরিষ্কার হওয়া দরকার—তারা ধর্মতত্ত্বের কারণে নয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে সফল হয়েছিল। তারা প্রায়ই সেই ধর্মীয় শ্রেণির দ্বারা নিপীড়িত হয়েছিল, যারা আজও আধিপত্য করছে।
আর গ্রীক দর্শন অনুবাদ করা আর বিবর্তন সমর্থন করা এক জিনিস নয়। অনুবাদ কাজকে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ভেবে ভুল করবেন না।
গোল্ডেন এজ শেষ হয়েছিল কারণ স্বাধীন চিন্তাকে ধর্মীয় কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ জানাতেই ইসলাম তাকে দমন করে।
বিশ্বাসে ফতোয়া, বিজ্ঞানে পিয়ার রিভিউ
দুটি জগতের নিয়ম আলাদা:
- বিজ্ঞানে আপনি ভুল করলে, সংশোধন হয়।
- ইসলামিক ধর্মতত্ত্বে আপনি ভুল বললে (বা এমনকি প্রশ্ন তুললে), অভিশপ্ত হন।
বিজ্ঞান উন্নতির জন্য পিয়ার রিভিউ ব্যবহার করে। ইসলামিক সমাজ চাপ প্রয়োগ করে চুপ করাতে।
অবাক হওয়ার কিছু নেই যে অধিকাংশ ইসলামিক দেশ উদ্ভাবনের সূচকে নিচের দিকে। আপনি কৌতূহলকে পাপ ভাবলে বিবর্তন শেখাতে পারবেন না।
সাংস্কৃতিক প্রভাব: কিভাবে ইসলাম শিশুদের যুক্তি থেকে দূরে সরিয়ে রাখে
ভাবুন আপনি একজন ১০ বছরের মুসলিম শিশু।
স্কুলে বলা হয়, মানুষ কোটি বছর বিবর্তিত হয়ে এসেছে।
বাড়িতে বলা হয়, আপনি কাদা থেকে তৈরি এক পুতুলের বংশধর।
আপনাকে কোনটা বিশ্বাস করতে বাধ্য করা হয়?
এটা শুধু খারাপ বিজ্ঞান শিক্ষা নয়—এটা বুদ্ধিবৃত্তিক নিপীড়ন। সেই শিশু সমালোচনামূলক চিন্তা করতে শেখে না। সে শিখে, “যেটা আমাকে ঝামেলায় ফেলবে না, সেটাই সত্য।”
এটা ধর্ম নয়। এটা এক ধরণের পবিত্র মানসিক প্রোগ্রামিং।
হিজাব বনাম হেলিক্স: ইসলাম বনাম জীববিজ্ঞান
যদি আপনি বিবর্তনের সাথে লিঙ্গ পরিচয় বা যৌনতা সম্পর্কিত বিষয় মিলাতে যান, আপনি কুরআনিক অস্বীকারের মাইনফিল্ডে পা রাখবেন।
ইসলামী তত্ত্ব মানে না:
- আমরা জৈবিকভাবে বৈচিত্র্যের দিকে বিবর্তিত হয়েছি।
- লিঙ্গ একটি বর্ণালী হতে পারে।
- সমকামিতা শত শত প্রজাতিতে স্বাভাবিক।
কেনই বা মানবে? যদি আপনি বিশ্বাস করেন আল্লাহ সব কিছু নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন, তাহলে যে কোনো বিচ্যুতি হবে পাপ—প্রকৃতির বিরুদ্ধে নয়, আল্লাহর বিরুদ্ধে।
এটা শুধু বিজ্ঞান অস্বীকার নয়। এটা বাস্তবতার অস্বীকার।
যখন মুরতাদরা জীববিজ্ঞানী হয়ে ওঠে
বহু প্রাক্তন মুসলিমের জন্য, বিজ্ঞান হলো মুক্তির রাস্তা।
তাদের জন্য বিবর্তন কেবল একটি তত্ত্ব নয়—এটা বিদ্রোহ।
এটা বলার একটি উপায়: “আমি আর এই রূপকথা কিনছি না।”
প্রথমে আদম-হাওয়া নিয়ে প্রশ্ন, তারপর বন্যা, তারপর অলৌকিক ঘটনা, তারপর নবী। এরপর? আপনি আর মসজিদে নন।
আপনি লাইব্রেরিতে—হিজাব ছাড়া, অপরাধবোধ ছাড়া, এবং Scientific American এর সাবস্ক্রিপশন সহ।
ইসলাম বনাম বিবর্তন: ২১শ শতাব্দীতেও যুদ্ধ চলছে
২০২৫ সাল। এআই গান লিখছে। আমরা মঙ্গলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। ফিনল্যান্ডের শিশুরা CRISPR নিয়ে কাজ করছে।
অন্যদিকে, কোটি কোটি মানুষ আজও শিখছে—“বানর থেকে মানুষ হওয়া” কেবল অপমান, অন্তর্দৃষ্টি নয়।
ধর্মীয় নেতারা বিজ্ঞানকে বলেন “পশ্চিমা দূষণ।” কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক? জিপিএস? স্মার্টফোন? সেগুলো ঠিকই “হালাল”।
আপনি বিজ্ঞানী না হয়ে বিজ্ঞান চাইলে সেটা হবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভিখারিপনা।
আল্লাহ বনাম বিবর্তন: পাঠ্যবই যেন আদালতের কাঠগড়ায়
- তুরস্কে, ২০১৭ সালে হাইস্কুল কারিকুলাম থেকে বিবর্তন বাদ। সরকার বলেছে, “ছাত্ররা এখনো প্রস্তুত নয়।” মানে: ধর্মগ্রন্থ চ্যালেঞ্জ না করুক।
- পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও বিবর্তনের সামনে বড় বড় সতর্কবাণী থাকে—“এটা প্রমাণিত সত্য নয়।” যা বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক ঐক্যমতের সম্পূর্ণ বিপরীত।
- সৌদি আরবে বিবর্তনকে শুধু খণ্ডন করতে পড়ানো হয়—আয়রনিকভাবে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিজেই অস্ত্র বানানো হয়েছে।
এইগুলো আলাদা ঘটনা নয়। এটা বাস্তবতার বিরুদ্ধে একটি সুসংগঠিত যুদ্ধ।
পশ্চিমে ইসলামিক আপোষ? শুধু মুখে মুখে
পশ্চিমে ইসলামিক আপোলজিস্টরা কুরআনের আয়াতকে “বিবর্তনের প্রমাণ” হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেন। বলেন, “দেখুন, কুরআন তো পর্যায়ক্রমিক সৃষ্টি বলেছে!”
না। “আমরা তোমাকে জমাট রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছি” বললে সেটা আণবিক জীববিজ্ঞান হয় না। এটা ছন্দময় ভাষা, গবেষণা নয়।
এটা সমন্বয় নয়। এটা ধর্মীয় স্পিন।
আধুনিকতা বেছে বেছে গ্রহণ করা: এক ধরনের মুনাফিকি
ইসলামিক সমাজগুলো বিজ্ঞানের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে, কিন্তু তার ফল ভোগ করে:
- এমআরআই? ঠিক আছে।
- ভ্যাকসিন? অবশ্যই।
- গুগল ম্যাপস? আলহামদুলিল্লাহ।
- মানব বিবর্তন? নাউযুবিল্লাহ!
এটা বিশ্বাস নয়। এটা জ্ঞানচর্চার ফ্রি-রাইড।
ইসলাম কীভাবে মতপ্রকাশকে দমন করে: বিবর্তন সংস্করণ
বিজ্ঞান ধর্মকে হারাতে চায় না। শুধু টিকে থাকতে চায়।
কিন্তু যেখানে ইসলাম আইন, সেখানে বিজ্ঞান লাইফ-সাপোর্টে।
জীববিজ্ঞান পড়ানোয় অধ্যাপক গ্রেপ্তার হন। বিবর্তন নিয়ে প্রবন্ধ লিখলে ছাত্র বহিষ্কৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধর্মীয় মাদ্রাসা হয়ে যায়—মাইক্রোস্কোপ সহ।
এটা শিক্ষা নয়। এটা ল্যাব কোটে ধর্মীয় প্রচারণা।
শেষ কথা: ডিএনএ মিথ্যে বলে না—কিন্তু ধর্মগ্রন্থ পারে
মানব জিনোমে ৩.২ বিলিয়ন অক্ষর। প্রতিটা বলছে গল্প—পরিবর্তন, অভিযোজন, বিবর্তনের।
কুরআনে আছে ৬,০০০ আয়াত। বেশিরভাগ বলছে কী ভয় পাবে, কী করবে না, এবং কাকে মানবে।
একটা বলে আপনার পূর্বপুরুষের সত্যি গল্প।
আরেকটা বলে, ঐ গল্প নিয়ে প্রশ্ন করলে কী শাস্তি পেতে হবে।
আপনি সিদ্ধান্ত নিন, কোনটা আপনার বিশ্বাসের যোগ্য।
কারণ ইসলাম বনাম বিবর্তনের যুদ্ধে, প্রশ্ন করতে উৎসাহ দেয় একটাই পক্ষ।
এবং সেটা কখনো ফতোয়া দেওয়া পক্ষ নয়।